সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
পরিবর্তন ডেস্কঃ জীবনের নিরাপত্তাহীতার জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন ঢাকা-১৭ আসনের আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।
বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুরে আশকোনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
হিরো আলম বলেন, আমার জীবনের নিরাপত্তাহীনতার জন্য পুলিশ প্রশাসন দায়ী। যেদিন আমার ওপর হামলা করা হয়, সেদিন যদি পুলিশ আমাকে গাড়িতে তুলে দিত, তাহলে হামলার হাত থেকে আমি রক্ষা পেতাম।নিজের জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে আট থেকে ১০ জন আমার মহানগর প্রজেক্টের অফিসে এসে নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। নিরাপত্তাকর্মীকে তারা বলেছেন, হিরো আলমকে ডাক দে, সে কোথায় থেকে লাইভ করছে, ওকে ডাক দে, ওর খবর আছে।
শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, সেদিন বাড়িতে যাওয়ার পর দেখি সারা শরীরে দাগ। বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে। আপাতত চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়েছি।
বিভিন্ন দেশের বিবৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাপারটাকে আমি ভালো চোখেই দেখছি। আমার কথা হলো, আমাকে যদি কারোর পছন্দ না হয়, তাহলে ভোট দেবেন না। কিন্তু আমার গায়ে হাত তোলার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।
তিনি ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেন, টাকা দিয়ে একপক্ষ ভোট কিনেছে। একটা মেয়ে একাই ৫০টা ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে। এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আমাকে ইচ্ছা করেই হারানো হয়েছে।
রাজনৈতিক অবস্থানের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। আগেও একা ছিলাম, এখনও একা আছি। প্রয়োজনে নিজেই রাজনৈতিক দল তৈরি করব।
তিনি বলেন, হামলাকারীদের সবাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। কিছু লোককে তারা আটক করেছে, যারা হামলা করেনি। কিন্তু মূল হামলাকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইইউ এবং ১২টি দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশন। আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস।
ইইউ ছাড়া বাকি দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড।
বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, আমরা গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানাই। আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে।হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় এরই মধ্যে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্তের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার।
প্রসঙ্গত, সোমবার ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের শেষের দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল ভোটকেন্দ্রের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা চালায়। মারধর থেকে বাঁচতে একপর্যায়ে হিরো আলম দৌড়ে পালিয়ে যায়। হামলাকারীরা এ সময় তাকে পেছন থেকে ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে তিনি বনানীর ২৩ নম্বর সড়কে গিয়ে একটি রিকশায় ওঠেন। পরে গাড়িতে করে চলে যান।
হামলার পর সংবাদিকদের হিরো আলম বলেন, দেশে যে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই, সেটি আমি বিদেশিদের কাছে তুলে ধরব। পাশাপাশি আমার ওপর হামলার বিচার চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকান অ্যাম্বাসিকে অভিযোগ দেব। শুধু তাই নয়, যেখানে যেখানে অভিযোগ জানাতে হবে, আমি প্রতিটা জায়গায় চিঠি দেব।
এই আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ৫ মাস আগে এ উপনির্বাচন হয়।
উপনির্বাচনে ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত। একতারা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট। যদিও পরে তার ওপর হামলা ও এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়াসহ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন হিরো আলম। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিকদার আনিসুর রহমান লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন প্রায় ১৫০০ ভোট।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনের ভোটার ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৫৩ হাজার ৫৮০।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।